বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ অপরাহ্ন
রাঙ্গাবালী প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবিবাহিত কিশোরী গৃহপরিচারিকা। প্রথমে ধর্ষণের অভিযোগ এনে থানায় ভাড়াটিয়ার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা। পরে বয়ান বদলে বাড়িওয়ালাকে অভিযুক্ত করে এফিডেভিট (হলফনামা)। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ১৮ বছর বয়সী কিশোরী গৃহপরিচারিকার বাড়ি উপজেলার চদ্রী মাঝি গ্রামে। তার বয়স যখন ৫, তখন তার বাবা মারা যায়। মা মানসিক ভারসম্যহীন। দুই বোনের মধ্যে বড় সে। স্থানীয়রা জানায়, সংসারে রোজগারের সদস্য না থাকায় প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান দুধা মিয়ার বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করছিল সে। ওই বাড়িতে কাজ করা অবস্থায় অন্ত:সত্ত্বা হয়।
বিষয়টি জানাজানি হলে গত ১৮ মে রাঙ্গাবালী থানায় ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা করে ওই কিশোরী। ওই মামলায় হাবিবুর রহমানের ভাড়াটিয়া খলিল দালালের ছেলে প্রান্ত দালালকে (১৫) আসামি করা হয়। মামলায় কিশোরীর অভিযোগ, গত বছরের ১ নভেম্বর জোরপূর্বক প্রান্ত দালাল তাকে ধর্ষণ করে। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে তিনি এ কথা কাউকে প্রকাশ করেনি। পরে পুণরায় বেশ কয়েকদিন ধর্ষণ করে। যার কারণে সে অন্ত:স্বত্ত্বা হয়ে পড়ে।
এ মামলায় বাড়িওয়ালা হাবিবুর রহমান ১ নম্বর স্বাক্ষী ছিলেন। কিন্তু বয়ান বদলে গত ২ জুন পটুয়াখালী বিজ্ঞ নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে এফিডেভিট করেন কিশোরী।
এফিডেভিটে ওই কিশোরী উল্লেখ করেন, তার সরলতা ও আর্থিক অস্বচ্ছলতার সুযোগ নিয়ে মিথ্যা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে হাবিবুর রহমান (বাড়িওয়ালা) তাকে ধর্ষণ করে। যার ফলে অন্ত:স্বত্ত্বা হয়ে পড়েন। চলতি বছরের ১৮ মে হাবিবুর রহমান কৌশলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয় তার। পরে তিনি জানতে পারেন, তাকে বাদী করে প্রান্ত দালালকে ধর্ষণ মামলার আসামি করা হয়। কিন্তু তাকে প্রান্ত দালাল নয়, হাবিবুর রহমান ধর্ষণ করেছে বলে বয়ানে উল্লেখ করে কিশোরী।
থানায় মামলার পর নোটারি পাবলিকে বয়ান বদলে এফিডেভিটের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জনমতে প্রশ্ন উঠেছে, ধর্ষক ভাড়াটিয়ার ছেলে নাকি বাড়িওয়ালা? নাকি এর পেছনে অন্যকিছু লুকিয়ে আছে?
কিশোরী অভিযোগ করে, ‘হাবিবুর রহমানই ধর্ষণ করেছে আমাকে। এতে আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছি। আমার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে যায়। কিন্তু হাবিবুরের নাম প্রকাশ করলে হাবিবুর স্ট্রোক করবে বলে ভয়ভীতি দেখায় আমাকে। সবকিছুর দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে হাবিবুরের কথা মতো যাতে চলি, এ জন্য কোরআন শরিফ ছুঁয়েও শপথ পড়ায় আমাকে।
ওই কিশোরী আরো বলেন, ‘হাবিবুর প্রথমে আমার (ভিকটিম) মামা বাবু বাঙালি, পরে খলিল দালারের (ভাড়াটিয়া) নাম থানায় বলতে বলে। কিন্তু বাবার বয়সী খলিলের নামে এমন মিথ্যা কথা বলবে না বিধায় আমি অন্য কৌশল করেন। খলিলের ছেলে প্রান্তর বয়স কম। তার নাম বললে থানায় মামলা হবে না, ওর নাম থানায় বলতে বলে।
প্রান্ত দালালের বাবা খলিল দালাল বলেন, ‘করোনার কারণে স্কুল বন্ধ। তাই ছেলেকে নিয়ে দুই মাস আগে হাবিবুর রহমানের ভাড়াবাসা ছেড়ে নিজের বাড়ি চলে আসি। পরে জানতে পারি, এসব ঘটনা। চক্রান্ত করে আমার ছেলেকে আসামি করা হয়েছে।
সব অস্বীকার করে এফিডেভিটে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান দুধা বলেন, ‘ও (ভিকটিম) একেক সময় একেকজনের কথা বলে। ৬৮ বছর বয়সে আমি এ কাজ করতে পারি না, সব মিথ্যা। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে কয়েকজন মিলে এফিডেভিট করেছে। আমার কাছে টাকাও দাবি করেছে। কিন্তু সত্য ঘটনা বের হবেই।
রাঙ্গাবালী থানার ওসি আলী আহম্মেদ বলেন, ‘মেয়ের বক্তব্যের ভিডিও আছে আমাদের কাছে। পরে এসে এজাহার দিয়েছে। ওই এফিডেভিটে কাজ হবে না। মামলা তদন্তধীন। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হবে।
Leave a Reply